শুদ্ধাচার কী? ধর্মের ফলিত রূপ কী?

শুদ্ধাচার কী? ধর্মের ফলিত রূপ কী?

ধর্মের ফলতি রূপ হচ্ছে শুদ্ধাচার আর অধর্মের ফলিত রূপ হচ্ছে দুরাচার। একজন মানুষের আচরণই বলে দিবে তিনি ধার্মিক না অধার্মিক। প্রকৃত পক্ষ্যে একজন ধার্মিক কখনো দূরাচারী হতে পারে না, আবার একজন দূরাচারীও ধার্মিক হিসেবে গণ্য হতে পারে না।

ভালো মানুষের ভূষণ হচ্ছে শুদ্ধাচার । একজন শুদ্ধাচারী মানুষই ভালো মানুষ। ভালো , কল্যাণকর, সত্য ও সুন্দর সবই শুদ্ধ। মন্দ, অকল্যাণকর, অসত্য ও পঙ্কিল সবই অশুদ্ধ। ন্যায় ও মানবিকতা যেমন শুদ্ধ, অন্যায়, জুলুম ও অমানবিকতা তেমনই অশুদ্ধ।

যিনি ভালো-মন্দ সম্পর্কে জানেন এবং বাস্তব জীবনে তা মানেন তিনিই সত্যিকার অর্থে শুদ্ধাচারী ও ধার্মিক। আর এর বিপরীত যিনি তিনিই দূরাচারী ও অধার্মিক।

সূরা লোকমানের ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “চালচলনে সুশীল হও। মোলায়েম কন্ঠে কথা বলো। নিশ্চয়ই গাধার কন্ঠস্বর সবচেয়ে কর্কশ। এখানে শুদ্ধাচারী হওয়ার স্রষ্টার পক্ষথেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সূরা কাহাফ এর ৭-৮ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলআমীন বলেন, “(হে মানুষ!) কর্ম ও আচরণে কে উত্তম, তা পরীক্ষার জন্যেই আমি জমিনের ওপর বিরাজমান সকল (আকর্ষণ ও) সৌন্দর্যকে সৃষ্টি করেছি। শেষ পর্যন্ত সবকিছুকেই আমি বিরান কঙ্করভূমিতে রূপান্তরিত করব।” অর্থাৎ পৃথিবীর যে সৌন্দর্যকে, যে পাথির্ব সম্পদকে আমরা লাভ করার জন্যে চরম মাত্রায় দূরাচারী হয়ে পড়ছি, সে সব সৌন্দর্য, সম্পদ আমাদের জন্যে পরীক্ষা ছাড়া আর কিছু্ই নয়। সূরা কাহাফ এর ৪৬ নম্বর আয়াত এর শুরুতে স্রষ্টা বলেন, “ধনসম্পত্তি ও সন্তান সন্ততি পাথির্ব জীবনের সাময়িক শোভা।” অথচ আমরা কত বোকা যে সাময়িক এই শোভা প্রাপ্তির জন্যে আমাদের অমূল্য সম্পদ আচার-ব্যবহার তথা চারিত্রিক সৎগুণাবলীকে বির্সজন দিয়ে চরম অমানবিক হয়ে যাচ্ছি, চিন্তা ও কর্মে পাশবিক হয়ে উঠছি। আর চুড়ান্তভাবে স্রষ্টার নেয়া পরীক্ষায় আমরা অকৃতকার্য হয়ে পড়ছি।

সূরা আহকাফ এর ১৫ নম্বর আয়াতের শুরুতে আল্লা তায়ালা বলেন, “এখন আমি মানুষকে তার মা-বাবার সাথে ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দিচ্ছি (এটি উত্তম সৎকর্মের একটি)——। ” এই আয়াতাংশে আমরা যদি একটু খেয়াল করি তাহলে দেখবো যে এখানে স্রষ্টা মা-বাবার সাথে সন্তানের ভালো ব্যববহার করার বিষয়টি বুঝাতে ‘নির্দেশ’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ সর্বোচ্চ জোর দিয়ে সন্তানকে বলা হয়েছে মা-বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করতে। কেননা এটি একটি উত্তম সৎকর্ম।

আসলে চিন্তা ও কর্মে একজন মানুষ কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে সূরা আহজাব এর ২১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, ‘আল্লাহ ও মহাবিচার দিবস সম্পর্কে যারা সচেতন এবং আল্লাহকে যারা বেশি বেশি স্বরণ করে, নিশ্চয়ই তাদের জন্যে আল্লাহর রসূলের মধ্যেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।’ রাসূল (সঃ) তাঁর জীবনাদর্শ দিয়েই জয় করেছেন মানুষের হৃদয়, আর হৃদয়ে হৃদয়ে স্থাপন করেছেন মহান প্রভূর বাণী। পরবর্তী লেখাতে চেষ্টা করবো রাসূল (সঃ) এর জীবনাদর্শ, জীবনাচরণ সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করার জন্যে ইনশাআল্লাহ। মহান রাব্বুল আলআমীন আমাদের সবাইকে শুদ্ধাচারী হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.