– মনের ভেতরের অহমই হচ্ছে প্রকাশিত রাগের কারণ।
– কোন কিছু নিজের মন মতো না হলেই আমরা রাগান্তিত হই।
– রাগ হচ্ছে শয়তানের গোপন অস্র। শয়তানের প্রলোভন ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে মানুষ রাগান্বিত হয়।
– নিজেকে অনাকাঙ্খিত, উপেক্ষিত, অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বা গুরুত্বহীন মনে করলে আমরা ক্ষোভ পোষণ করি।
– মানসিক চাপ, ভুল দৃষ্টিভঙ্গি, হতাশা অনেক ক্ষেত্রে রাগের উৎপত্তি।
– মানুষ সাধারণত রাগের পেছনের কারণকে যৌক্তিক প্রমাণ করার চেষ্টা করে।
– রাগান্বিত অবস্থায় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না।
– রাগ কখনো কোন কল্যান বয়ে আনতে পারে না।
– রাগের কোন গঠনমূলক দিক নেই; আছে শুধু ধ্বংসাত্বক দিক।
– কেউ যখন রাগে তখন তার সুন্দর চেহারা বিকট ও হিংস্র দেখায়। অর্থাৎ তাকে মানবিক নয়; দানবিক দেখায়।
– রাগের মাথায় নেয়া সকল সিদ্ধান্তই ভুল ও ক্ষতিকর।
– অধিকাংশ সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে রাগের সময় নেয়া সিন্ধান্তে।
– রাগের সময় মানুষ শানিত কথা বলে। অন্যের শানিত কথায় যেমন নিজের হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়; তেমনি নিজের শানিত কথায়ও অন্যের হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়।
– রাগের ফলে নিজের শরীর ও মনে খারাপ প্রভাব পড়ে।
– রাগের ফলে কাছের মানুষের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
– রাগী ব্যাক্তিকে কেউ পছন্দ করেনা; সকলে তাকে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে।
– রাগের সময় মানুষ বন্য আচরণ করে এবং রাগী ব্যাক্তিকে হিংস্র প্রাণীর ন্যায় দেখায়।
– রাগ শুধু অন্যের নয় নিজের জন্যও ক্ষতিকর।
– রাগ পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন আলগা করে / ছিন্ন করে।
– ধমীয় দৃষ্টিতে রাগান্বিত হওয়া একটি পাপ।
– রাগ ইমানকে দূর্বল করে।
– রাগের ফলে মানুষের মেধা, সৃজনশীলতা, প্রজ্ঞা ও বিচারবুদ্ধি লোপ পায়।
– রাগ হচ্ছে আগুনের স্ফুলিঙ্গ যা নিজের ও অন্যের হৃদয় জ্বালিয়ে দেয়।
– রাগ কোন সমস্যার সমাধান করতে পারেনা, কোন কিছু সৃজন করতে পারে না; বরং সব কিছু ধ্বংস করে।
– রাগান্বিত হওয়া মানে হচ্ছে অন্যের ভুলের জন্যে নিজেকে শাস্তি দেয়া।
– এক মিনিট রেগে থাকা জীবনকে এক মিনিটের প্রশান্তি থেকে বঞ্চিত করা।
– রাগ হচ্ছে বিপদের পূর্ব সংকেত।
– রাগ হচ্ছে একটি ভয়াবহ নেতিবাচক শক্তি যা সকল ভাল ও কল্যাণ শক্তিকে দূর্বল ও বিতাড়িত করে।
– এক মুহুর্তের রাগ সারা জীবনের জন্য দুঃখের কারণ হতে পারে।
– রাগ মানুষকে ছোট করে অথচ ক্ষমা মানুষকে মহৎ করে।
– মূলত আমাদের সদয় সম্মতি ছাড়া রাগ, ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি আমাদের অন্তরে বাস করতে পারে না।
আবু হুরায়রা (র) এর থেকে বর্ণিত হাদিস ‘রাসূল (সঃ) বলেন – ‘তোমাদের মধ্যে যে যুদ্ধ জয় করে সে প্রকৃত বীর নয়; তিনিই প্রকৃত বীর যিনি রাগকে দমন করতে পারেন।’ (বুখারী)
যে দূর্বল ও বোকা সেই রাগান্বিত হয়।
রাসূল (সঃ) বলেন ‘রাগের সময় তোমরা এই দোয়া পাঠ কর – ‘আমি অভিশপ্ত শয়তানের কাছ থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’
রেগে যাওয়া মূলত শয়তানের প্ররোচনা। আর এ বিষয়ে প্রবিত্র কোরআনে সূরা হা-মীম-আস্-সেজদাহ্ এর ৩৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন “আর শয়তান যদি তোমাকে উত্তেজিত (রাগান্বিত হয়ে বিবাদে জড়িত) হতে প্ররোচনা করে, তবে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো। তিনি সব শোনেন, সব জানেন।”
রেগে যাওয়া সম্পর্কে রাসূল (সঃ) বলেন ‘রাগ হচ্ছে শয়তানের প্রভাব আর শয়তান আগুনের তৈরী। আর পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।’
রাসূল (সঃ) বলেন, ‘একজন মুসলিম তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশী রাগান্বিত হয়ে থাকতে পারে না; কারন যে এমনটি করে এবং ঐ অবস্থায় মারা যায় তার স্থান জাহান্নাম।’(আবু দাউদ)
রাগ প্রশমনকারী সম্পর্কে রাসূল (সঃ) বলেন ‘যে তার রাগকে দমন করে আল্লাহ তার উপর থেকে শাস্তি তুলে নেন এবং যে তার জিহবাকে নিয়ন্ত্রন করে আল্লাহ তার পাপ গোপন করেন।’ (তাবরানী)
রেগে যাওয়া সম্পর্কে মহামতি বুদ্ধ বলেন, ‘তোমার রাগের জন্য তোমাকে শাস্তি দেয়া হবে না; তোমার রাগের দ্বারাই তুমি শাস্তি পাবে।’
বুদ্ধ আরো বলেন, ‘ক্ষোভ হচ্ছে এমন একটি বিষ; যা নিজে পান করে অথচ অন্যের মুত্যৃ কামনা করে।’
ক্ষোভ হচ্ছে একটি বিষাক্ত নেতিবাচক আবেগ যেটা একজনের শান্তি নষ্ট করে ও অনের জন্যে কল্যান করার ক্ষমতাকে নষ্ট করে।
রাগ – ক্ষোভ হচ্ছে অন্যের দ্বারা সৃষ্ট ফাঁদ। আর এই ফাঁদেই আমরা বার বার ঘুরে ঘুরে পা দেই।
প্রভু আমাদেরকে রাগ-ক্ষোভ নামক এই নেতিবাচক আবেগগুলো থেকে মুক্ত হওয়ার ও মুক্ত থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন। ইনশাআল্লাহ পরবর্তী লেখায় রাগ-ক্ষোভ থেকে মুক্ত থাকার সহজ কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো।