শুদ্ধাচারী ভালো মানুষই আজকে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন কেন সেটাই এই আলোচনায় আলোকপাত করার চেষ্টা করবো। এখন সময়টা যেন কেমন! চারপাশে শুধু অনিরাপত্তা। প্রতিটি মানুষের চোখে-মুখে ভয়াবহ আতঙ্কের ছাপ। এই বুঝি আমি বিপদে পড়ে গেলাম। হায়েনারা ঝাপিয়ে পড়লো বুঝি। এক অজানা আতঙ্কে সবাই আতঙ্কিত।
চার বছরের শিশু থেকে ৯০ বছরের বৃদ্ধা, কেউ নিরাপদ নয় ধর্ষক এর অশুভ হাত থেকে। মামার কাছে ভাগ্নী, চাচার কাছে ভাতিজী, শিক্ষকের কাছে ছাত্রী এমনকি বাবার কাছে মেয়ে কেউ কোথাও নিরাপদ নয়। এই যখন অবস্থা, তখন সাধারণ মানুষের প্রশ্ন কোন পৃথিবীতে রেখে যাবো আমাদের সন্তানদেরকে?
আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে জীবন্ত কণ্যাশিশুকে মাটিতে পুতে ফেলা হতো। এখন কণ্যাশিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করে টুকরু টুকরো করে ফেলা হচ্ছে। তাহলে এখণ কী অন্ধকারের যুগ নাকি ঘোর অন্ধকারের যুগ?
চারপাশে ওৎপেতে আছে নরপিশাচরা। ঝাপিয়ে পড়বে যেকোন সময়। না আছে জানের নিারাপত্তা, না আছে মালের নিরাপত্তা। সম্মান মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে অহরাত্রি। কেউ কাউকে মানে না। ছোট বড়কে সম্মান দেয়না, বড় ছোটকে স্নেহ করে না।
ত্রমশ মানুষের মধ্যে হতাশা, অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা, দুশ্চিন্তা, অনিরাপত্তা, আতঙ্ক বেড়ে যাচ্ছে। সারাক্ষণ-সর্বত্র একজন মানুষ যখন নিজেকে অনিরাপদ মনে করে তখন সে না থাকে শারিরীকভাবে ভালো, না থাকে মানসিক ভাবে প্রশান্ত। ফলশ্রুতিতে নানা ধরনের শারিরীক-মানসিক জটিল ব্যাধি তৈরী হচ্ছে। শারিরীক-মানসিক দীর্ঘমেয়াদী এই অসুস্থতা, অস্থিরতার ফলে মানুষের কাজে মনোযোগায়নে ব্যাঘাত ঘটছে, কর্মউদ্দীপনা, কর্মক্ষমতা-কর্মদক্ষতা কমে যাচ্ছে, সৃজনশীলতা নষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু এমনটিতো আর চলতে দেয়া যায় না। এখনই লাগাম টেনে ধরতে হবে পরিস্থিতির। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ভালো মানুষ তৈরী করার অনুকূল করতে হবে। প্রতিটি ধর্মেই ভালো মানুষ হওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ভালো মানুষ যেমন হওয়ার বিষয় তেমনই ভালো মানুষ গড়ার বিষয় রয়েছে।
ভালো মানুষ গড়ার ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্ব ভূমিকা। আর এই দায়িত্ব পালনের এখন আর কোন বিকল্প নেই। প্রতিটি মানুষকে বিশ্বায়নের উপযোগী করে গড়ে তোলার পাশাপাশি উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী করে গড়ে তুলতে হবে। নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ হওয়ার সাথে সাথে সৎ হতে হবে। কেননা সততা ছাড়া দক্ষতা মূল্যহীন, দক্ষতা ছাড়া সততা অর্থহীন। একমাত্র ভালো মানুষের কাছেই হবে আগামী দিনের বিশ্ব একটি নিরাপদ বাসযোগ্য বিশ্ব। রাসূল (সঃ) বলেন, “একজন মুসলিম তিনিই যার জিহবা ও হাত এর অনিষ্ট থেকে অন্যরা নিরাপদ” (বুখারী ও মুসলিম)। আমাদের প্রত্যেকের হাতে প্রত্যেকে নিরাপদ হউক। দানবিক নয়, গড়ে উঠোক এক মানবিক মহাসমাজ।
পরম করুণাময় আমাদেরকে সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও শুদ্ধাচারী ভালো মানুষে পরিণত হওয়ার সুযোগ দান করুণ। আমীন।