মনোযোগ সুচাগ্র হলে সাফল্য কী নিশ্চিতভাবে ধরা দিবে?

মনোযোগ সুচাগ্র হলে সাফল্য কী নিশ্চিতভাবে ধরা দিবে?

মনের যত শক্তি, সামর্থ্য থাকুক না কেন, তা কাজে লাগানোর জন্যে প্রয়োজন মনোযোগ। আসলে মনোযোগই কাজের সাথে আমাদের মনকে যুক্ত করে। যে কাজে মনোযোগকে সুচাগ্র করা যায় সে কাজই আমাদেরকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়। মনোযোগই কাজে শক্তি সঞ্চার করে। এজন্য বলা হয় – Mind is the source of all energy. Where mind goes, energy flows. তাই কীভাবে আমরা আরো মনোযোগী হতে পারি, কেন মনোযোগ ছুটে যায়, একে ধরে রাখতে কী লাগে-এসব নিয়েই আজকের আলোচনা।

কাজের প্রতি মনোনিবেশের বিষয়ে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর একটি সুন্দর উক্তি আছে। তিনি খুব সুন্দর করে বলেছিলেন, আমি যখন স্টুডিওতে ঢুকি, দেহটাকে দরজার বাইরে রেখে, মনটাকে ভেতরে নিয়ে ঢুকি, যেভাবে মুসলমানরা জুতা বাইরে রেখে মসজিদে ঢোকে।

ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি, বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালাম তার জীবনীতে লিখেছেন, এসেম্বলি শপে আমি প্রবেশ করতাম আমার অন্যান্য সমস্যা বাইরে রেখে। ঠিক আমার বাবা নামাজ পড়ার জন্যে যেভাবে জুতো বাইরে রেখে মসজিদে প্রবেশ করতেন।

উপমহাদেশের বিখ্যাত বহুভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি যখন পড়তেন আশপাশের কোনোকিছু খেয়াল করতেন না। একদিন লাইব্রেরিতে তিনি বই পড়ছেন, দেখা গেল লাইব্রেরি বন্ধ হওয়ার সময় হয়ে গেল। শুধু তিনি একা লাইব্রেরিতে। লাইব্রেরিয়ান তাকে ভেতরে রেখে দরজা তালা বন্ধ করে বাড়ি চলে গিয়েছে। পরে তালা খুলিয়ে লাইব্রেরি থেকে বের হয়েছিলেন।

অধিকংশ ক্ষেত্রেই আমরা কাজ করি যন্ত্রের মতো। কাজের সাথে না থাকে মমতা-ভালোবাসা-আবেগ না থাকে মনোযোগ। ফলে কাজ হয় আমাদের জন্যে নিরানন্দের ও বিরক্তির। আর এধরনের কাজ আমাদেরকে খুব সহজেই ক্লান্ত শ্রন্ত করো তোলে। আসলে অভ্যাসবশত কাজ করি বলেই আমরা কাজে আনন্দ পাই না। দিনের প্রতিটি কাজের সাথে চিত্তকে একাত্ম করতে পারলেই, মনোযোগ নিবদ্ধ করতে পারলেই যান্ত্রিকতার এই একঘেয়েমি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। আবার কাজ যদি সৎকর্ম বা ভালো কাজ না হয় সে কাজেও না থাকে মনোযোগ না থাকে নিজের কল্যাণ।

একটু খেয়াল করলে দেখবো যে, প্রতিদিন অফিসে যেতে ভালো লাগে না। প্রার্থনা করে তৃপ্তি পাই না। খাবার খেয়ে স্বাদ পাই না। কারণ যখন যা করছি তা মনোযোগ দিয়ে করি না, অভ্যাসের বশে করি, করতে হয় বলে করি। ইবাদত বা উপাসনার সময় তো পরম প্রভুর সাথে দেখা করছি, কথা বলছি। এতে তো মনে প্রশান্তি আসার কথা। অথচ ইবাদতে সেই অর্থে তৃপ্তি পাই না। কারণ ইবাদতে আমাদের মনোযোগ নেই। অথচ রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, হুদরিল কালব বা একাগ্রচিত্ততা ছাড়া নামাজ হয় না। আমরা কেন ইবাদত, উপাসনায় তৃপ্তি পাই না কারণ মনোযোগ দিয়ে নামাজ পড়তে পারি না। দেখা যায়, নামাজের সময় হুড়োহুড়ি করি বেশি। নামাজে দাঁড়ানোর পর রাজ্যের চিন্তাভাবনা মাথায় আসতে শুরু করে। অথচ হযরত আলী (রা) নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় তার পা থেকে যখন তীর খুলে নেয়া হচ্ছিল, তিনি টেরই পান নি। এটাই হলো মনোযোগ।

সফল মানুষেরা দৈনন্দিন জীবনের একয়েঘেমিকে আনন্দে রূপান্তরিত করেছেন কাজের সাথে মিশে গিয়ে, কাজের সাথে একাকার হয়ে গিয়ে। একবার এক শিষ্য শরৎচন্দ্র, স্বামী বিবেকানন্দের রুমে ঢুকে দেখলেন তিনি গভীর মনোযোগ দিয়ে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা পড়ছেন। তখনকার দিনে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার মোটা মোটা দশটা ভলিউম ছিল। এখনকার মতো একটা ডিভিডিতেই পাওয়া যেত না বা ইন্টারনেট ছিল না যে, এনসাইক্লোপিডিয়ার নির্দিষ্ট বিষয় লিখে গুগলে খুঁজলেই চলে আসবে। তখন অনেকে এত মোটা মোটা বই দেখেই পড়ার ব্যাপারে আগ্রহী হতেন না। শরৎচন্দ্র বললেন, স্বামীজী এত মোটা মোটা বই, এগুলো পড়ে মনে রাখা অসম্ভব একটা ব্যাপার! বিবেকানন্দ বললেন, কী বলছ তুমি? আমি এরইমধ্যে নয়টা ভলিউম পড়ে ফেলেছি। তুমি চাইলে আমাকে যে-কোনো জায়গা থেকে প্রশ্ন করে দেখতে পারো। শরৎচন্দ্র তখন একটা ভলিউম তুলে নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করলেন এবং অবাক হলেন যে, স্বামীজী কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাঁড়ি, কমাসহ বলে দিলেন সেখানে কী লেখা আছে। শরৎচন্দ্র বললেন, স্বামীজী কীভাবে সম্ভব? স্বামীজী বললেন, মনোযোগ এবং বিশুদ্ধতা নিয়ে যে-কারো পক্ষেই এটা সম্ভব। মনোযোগায়ন মানে গভীর মনোযোগ।

কেন মনোযোগী হতে হবে?

কারণ আমরা যার প্রতি মনোযোগী হবো, তা-ই আমাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। যে বিষয়ে মনোযোগী হবো, তা আমাদের আয়ত্তে এসে যাবে। আসল বিষয় হচ্ছে যতক্ষণ মনোযোগ দিতে না পারছি, ততক্ষণ আমরা কাজের সাথে একাত্ম হতে পারি না। 

পবিত্র কোরআনে সূরা আরাফ-এর ২০৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, যখন কোরআন পাঠ করা হয় তখন মৌন থাকো ও মনোযোগ দিয়ে শোনো। তাহলেই তোমরা রহমত পাবে।  স্রষ্টার বাণী থেকেও রহমত পেতে হলে শুধু শুনলে হবে না, মনোযোগ দিতে হবে। 

বুদ্ধবাণীতে বলা হয়েছে-খাবার সময় মনোযোগ দাও খাবার বিষয়ে, হাঁটার সময় হাঁটার বিষয়ে এবং হাসার সময় হাসির বিষয়ে। 

শ্রীমদ্ভগবতগীতায় বলা হয়েছে- For him who has no concentration, there is no tranquility. অর্থাৎ যে মানুষ মনোযোগ নিবন্ধ করতে পারে না, সে আসলে প্রশান্তিও পায় না। মনের প্রশান্তিকে স্থায়িত্ব দিতে হলে মনোযোগের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।

মনোযোগ হচ্ছে প্রতিটি দক্ষতার ভিত্তি। প্রাকৃতিক নিয়মই হচ্ছে যে, আমরা যার প্রতিই মনোযোগ দেবো তা-ই আমাদের দিকে আকৃষ্ট হবে। স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দিলে, আমরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবো। পরিবারের প্রতি মনোযোগী হলে, পরিবারে আমরা হবো সবচেয়ে আপন। সঙ্গীতে মনোযোগ দিলে সঙ্গীতের সুর মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করবে। পেশার প্রতি মনোযোগ দিলে পেশায় আমরা হবো দক্ষ। 

আসলে কোনো ব্যাপারে অমনোযোগী হওয়া মানে হচ্ছে তার প্রতি অবহেলা করা, অবজ্ঞা করা, নির্দয় হওয়া। তখন তা আসলে বেশিদিন আমাদের কাছে থাকবে না। যে কাজটা বা দায়িত্বটা আমরা বিরক্তি নিয়ে করছি, অবজ্ঞা করছি, দেখব ঐ দায়িত্ব আমাদের কাছে আর নেই। শুধু মানুষ কেন, কাজ, জড়বস্তুও কিন্তু আমাদের মনোযোগ বা মমতা বোঝে। আমরা যখনই তার প্রতি নির্দয় হচ্ছি সে আমাদেরকে ছেড়ে যাবে।

একজন চিকিৎসককে রোগীর প্রতি এতটাই মনোযোগী হতে হবে যেন রোগী মারা গেলেও আত্মীয়স্বজনরা বলতে বলতে যায়, হায়াত নেই তাই মারা গেছে। ডাক্তার সাহেব চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেন নি। এটি আসলে কখন সম্ভব? এটি তখনই সম্ভবপর হবে যখন কোনো চিকিৎসক তার রোগীর প্রতি মনোযোগ দেন। এভাবে প্রতিটি পেশার মানুষকেই তার পেশার প্রতি, তার দায়িত্ব-কর্তব্যের প্রতি গভীর ও মমতাময় মনোযোগী হতে হবে। তাহলেই সাফল্য এসে তার পদচুম্বন করবে।

আসলে মনোযোগ দিলেই কাজ আমাদের প্রতিদান দিতে শুরু করে। আমরা সফল হই। অখণ্ড মনোযোগ হলো মনের শক্তিকে সংহত করার সবচেয়ে বড় কৌশল। উর্দু ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি মির্জা গালিব তার গজলে এ কারণেই বলেছেন, when a drop falls in the river, it becomes river. When a deed is done well, it becomes the future. পূর্ণ আন্তরিকতা এবং মনোযোগ একটি কাজে যখন ঢেলে দেয়া যায় তখন সে কাজটি ভবিষ্যৎ হয়ে যায় বা কালজয়ী হয়ে যায়।

Magnifying Glass দিয়ে একটি কাগজের শীটে সূর্যের তাপকে কেন্দ্রীভূত করে ফেলতে পারলে যেমন মূহুর্তে কাগজটি জ্বলে উঠে, তেমনি আমাদের কাজে, অভিষ্ট লক্ষ্যে আমাদের মনোযোগকে ফোকাস করতে পারলে কাজটিও নিশ্চিতভাবে সফল হয়ে উঠে।

মনোযোগ আনার জন্যে একটি পদক্ষেপ হচ্ছে এমনভাবে দাঁড়ান বা বসুন যাতে অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া কম হয়। এজন্যে শরীর যত শিথিল থাকবে, পেশির টেনশন তত কমবে, ফলে শরীরের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ আসবে সহজে। তখন দার্শনিক কনফুসিয়াস-এর সেই কথা বাস্তবায়িত হবে যে, যখন বসে আছ তখন শুধু বসেই থাক, যখন দাঁড়ানো থাক শুধু দাঁড়িয়ে থাক, অস্থিরমনা হয়ো না। 

মনোযোগ না থাকার কারণ :

১.  আমাদের সামনে লক্ষ্য স্থির থাকে না :  পরীক্ষায় খারাপ করা ছাত্রটিই যখন ভিডিও গেম খেলছে বা ক্রিকেট দেখার উদ্দেশ্যে টিভির সামনে বসছে কী অখণ্ড তার মনোযোগ! কিন্তু পড়তে বসলেই বিপত্তি। পড়ার সময় সারা পৃথিবীতে কী ঘটছে সব সে টের পাচ্ছে, এমনকি খুব দূর রাস্তায় একটা গাড়ি শাঁ করে চলে গেল তা-ও কানে আসছে, এ সময়  ক্ষুধাবোধও বেড়ে যাচ্ছে, অর্থাৎ বিভিন্ন কাজের প্রতি মনোযোগ ভাগ হয়ে যাচ্ছে। কেন সে ভিডিও গেম বা ক্রিকেটকে যতখানি গুরুত্ব দিচ্ছে, পড়াশোনাকে ততখানি দিচ্ছে না? কারণ, কেন পড়তে হবে এটা তার কাছে পরিষ্কার না। যখন সে বুঝবে পড়াটা ভালোভাবে করলে পরীক্ষায় রেজাল্ট ভালো হবে এবং জীবনে প্রথম হওয়ার পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে, তখনই সে পড়ার ব্যাপারে আগ্রহী হবে। জীবন থেকে আমি কী চাই, কী করব-অনেকের সামনে এ লক্ষ্য থাকে না। আর থাকলেও তা কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা ভুলে যাই।

২. মনোযোগ বিনষ্টকারী উপকরণের এখন তো কোনো অভাব নেই। এর মধ্যে মারাত্মক হলো ভার্চুয়াল ভাইরাসের আগ্রাসন। আমরা এখন কোনোকিছু মনোযোগ দিয়ে পড়ি না, চিন্তা করি না, বিশ্লেষণ করি না। শুধু তাকাই। স্মার্টফোন, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের মনোযোগের সুতোটাকে ছিঁড়ে ফেলেছে। ২০১৫-তে মাইক্রোসফটের সমীক্ষা অনুযায়ী, স্মার্টফোন-বিপ্লব ঘটার আগে মানুষের মনোযোগের স্প্যান ছিল ১২ সেকেন্ড। আর এখন তা দাঁড়িয়েছে মাত্র আট সেকেন্ড। 

স্মার্টফোনের এই যুগে বাচ্চাদের বই পড়ার অভ্যাস, বাইরের দুনিয়া দেখা বা শোনার আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক অনেক কম। বেড়াতে গেলেও ঘাড় নিচু করে টিপছে স্মার্টফোন। চিকিৎসকদের ভাষায় তারা ভুগছে, Attention Deficit Disorder-এ। ২০১৫ সালের একটি গবেষণার রিপোর্ট অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে প্রায় ৫১.১ মিলিয়ন মানুষ এই ব্যাধিতে ভুগছে। 

৩. মনোযোগ বিঘ্নের আরেকটি বড় কারণ রাগ-ক্ষোভ-ঈর্ষার মতো নেতিবাচক আবেগ দিয়ে মনটাকে পূর্ণ রাখা। মন যখন নেতিবাচক জঞ্জালরূপী আর্বজনা দিয়ে পূর্ণ থাকে তখন মনকে কাজের সাথে যুক্ত করা যায় না।

কাজে মনোযোগ আনতে করণীয় : 

মেডিটেশন হচ্ছে মনের ব্যায়াম। মনোযোগকে সুচাগ্র করতে, ক্ষুরধার করতে মেডিটেশনের কোন বিকল্প নেই। আমাদের মন আসলে অস্থির। ঠিক বাঁদর যেমন অস্থির, পিংপং বল যেমন এক যায়গায় স্থির থাকে না, মনোযোগও তেমনই স্থির নয়। কিন্তু চর্চার মাধ্যমে মনোযোগকে স্থির করা যায়। আর সেই চর্চাই হলো মেডিটেশন। মেডিটেশন অস্থির মনকে স্থির করে, জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে, কালজয়ী কাজ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

এই যে মনের অস্থিরতা, এটা কমানোর জন্যেও মেডিটেশন প্রয়োজন। মন যত স্থির করতে পারব তত মনোযোগ দেয়াটা সহজ হবে। এই স্থিরতার জন্যেই প্রয়োজন মেডিটেশন। মনোযোগ মানে মনকে কাজের সাথে যোগ করা, মনকে বর্তমানে নিয়ে আসা। আসলে আমাদের মনের ওপরই নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে কম। আমাদের মন একই সময়ে বহু ধরনের কাজ করে। মন সবসময় কল্পনা, প্রত্যাশা, বিশ্লেষণ ও দুশ্চিন্তায় নিয়োজিত থাকে। মন অতীতে বা ভবিষ্যতে বিচরণ করে, বর্তমানে থাকতে চায় না। ফুটবল মাটিতে পড়ে যেমন অনির্ধারিত গতিতে ওপরে লাফিয়ে ওঠে, তেমনি আমাদের চিন্তাও বেশিরভাগ সময় অহেতুক লাফালাফি করে। ঋগবেদ-এ বলা হয়েছে, মন চলে যায় আকাশে, পাতালে, পাহাড়ে, সাগরে। মনকে নিয়ে আসো নিজেরই অন্তরে, যেন তা থাকে নিজেরই নিয়ন্ত্রণে। মনের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তখন আমার মন না বলে বলা উচিত মনের আমি। অথচ যেদিন একজন মানুষ বলতে পারবেন, হাঁ, আমার মন। যেদিকে তাকিয়ে থাকতে বলব সে সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে, তখন আমাদের প্রতিটি যুক্তিসঙ্গত চাওয়া পাওয়ায় পরিণত হবে। 

মনোযোগ আনার জন্যে একটি পদক্ষেপ হচ্ছে এমনভাবে দাঁড়ান বা বসুন যাতে অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া কম হয়। এজন্যে শরীর যত শিথিল থাকবে, পেশির টেনশন তত কমবে, ফলে শরীরের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ আসবে সহজে। তখন দার্শনিক কনফুসিয়াস-এর সেই কথা বাস্তবায়িত হবে যে, যখন বসে আছ তখন শুধু বসেই থাক, যখন দাঁড়ানো থাক শুধু দাঁড়িয়ে থাক, অস্থিরমনা হয়ো না। 

বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ইস্যুতে যে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছিল তার নাম হলো ‘‘দি মাইন্ডফুল রেভুল্যুশন‘‘। এই প্রতিবেদনের মূল কথাটিই ছিল মনোযোগ দিন, আপনি ভালো থাকবেন। 

আধুনিক বিজ্ঞানের নানারকম প্রযুক্তির সাহায্যে মাস্তিষ্ক পরীক্ষা করে নিউরোসায়েন্টিস্টরা রীতিমতো অভিভূত এজন্যে যে, মেডিটেশন সচেতনতা, মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে দারুণ কাজ করে। নভেম্বর ২০০৫-এ ম্যাসুচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের রিচার্স সায়েন্টিস্ট সারা লাজার ২০ জন নারী-পুরুষের ওপর চালানো তার এক গবেষণার প্রাথমিক ফল প্রকাশ করেন-যারা প্রতিদিন ৪০ মিনিট করে মেডিটেশন করতেন। তাদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে দেখলেন, নিয়মিত মেডিটেশনের পর তাদের মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্সের পুরুত্ব বেড়েছে। সেরিব্রাল কর্টেক্স হলো মস্তিষ্কের সেই অংশ যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ, মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে।  মনোযোগের জন্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন হচ্ছে আগ্রহ সৃষ্টি করা। আর আগ্রহ জাগাতে হলে বুঝতে হবে কাজটা কেন জরুরি এবং এর ফলাফলটা কেন গুরুত্বপূর্ণ। মেডিটেশনে আমরা এই লক্ষ্যটাকে পরিষ্কার করে দেখতে পারি, কাজের পরিকল্পনা সাজাতে পারি। কাজের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গিও ঠিক করতে পারি। ফলে কাজ শুরু করলে মনোযোগও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।

One thought on “মনোযোগ সুচাগ্র হলে সাফল্য কী নিশ্চিতভাবে ধরা দিবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published.