হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় কী?

হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় কী?

হতাশা ও দুশ্চিন্তা এগুলো হচ্ছে নেতিবাচকতা। আর নেতিবাচকতার কোন ভালো দিক নেই। এগুলো আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। ভুতের মতো পেছনে নিয়ে যায়। আমরা সাধারণত অতীত নিয়ে অনুশোচনায় ভুগি নয়তো ভবিষৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকি। আবার চাওয়া-পাওয়া-হতাশা, চাওয়া-না পাওয়া-অতৃপ্তি এই দুষ্টচক্রে আবর্তিত হতে থাকি।    

হতাশা ও দুশ্চিন্তা মূলত শয়তানের অস্র। এগুলো দিয়ে শয়তান মানুষকে নাশোকর করে তোলে। আমার বিষয়ে স্রষ্টার সিদ্ধান্ত সমূহকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তখন মনে হতে থাকে শুধু আমিই কেন? স্রষ্টা কী আর কাইকে দেখে না? এমনকি স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়েও আমার মনে শয়তান প্রশ্নের উদ্রেক করে। যে স্রষ্টা যদি সত্যি সত্যিই থাকতো তাহলে আমাকে কী দেখে না? আমার এই অবস্থা কেন? স্রষ্টা অনেক সময় নেয়ামত দিয়ে আমাদেরকে পরীক্ষা করেন আবার কখনো নেয়ামত তুলে নিয়ে পরীক্ষা করেন। আর তখন অজ্ঞতা বশত আমরা হতাশা ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ি, না শোকর হয়ে পড়ি। এ সম্পর্কে সূরা হুদ এর ৯ নম্বর আয়াতে স্রষ্টা বলেন, “বাস্তবতা হচ্ছে, যখন মানুষকে অনুগ্রহ সম্পদ দান করার পর তা ফিরিয়ে নেই, তখন সে হতাশায় ভেঙে পড়ে এবং (নেতিবাচকতা ও) অকৃতজ্ঞতায় ডুবে যায়।”

আসলে এর জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিই দায়ী। আমরা সুখ খুঁজি কোন বস্তুর মধ্যে বা কোন ব্যক্তির মধ্যে। যে ঐ ব্রান্ডের একটি মোবাইল ফোন আমাকে সুখ দিতে পারে, কিংবা এটা-ওটা পেলে আমি সুখী হবো। আমরা প্রত্যাশিত জিনিসটি যখন পেয়ে যাই তখন বেশীদিন আর সেটা আমাদেরকে সুখ দিতে পারে না। তখন মনে হয় আমারটাতো লেটেষ্ট না। এখন আর আমার এটা নয় বরং ওটা প্রয়োজন। ওটা যখন পেয়ে যাই, তখন আবার অন্যটা। এই দুষ্টচক্র চলতেই থাকে।

আবার অমুককে আমার জীবনে না পেলে আমি সুখী হবো না। দেখা যায় যে প্রত্যাশিত অমুককে জীবনে পেলেও আমরা সুখী হতে পারিনা। কারণ আমার সুখের ভার তুলে দিয়েছি অমুকের হাতে। যে অমুক আমাকে সুখী করবে।কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনা। আর আমাকে আমি সুখী করতে না পারলে কোন পণ্য বা কোন ব্যক্তি কখনো আমাকে সুখী করতে পারবে না।

আসলে সুখ নির্ভর করে শোকরিয়ার উপর। যে আমার যা আছে যথেষ্ট। আমার যা আছে তা নিয়েই আমি সুখী। আর দুশ্চিন্তা? কী নিয়ে? আমরা আসলে যা নিয়ে টেনশন বা দুশ্চিন্তা করি সেগুলোর অধিকাংশই আমাদের জীবনে ঘটে না। আর সে না ঘটা ঘটনাগুলো জীবনে ঘটলে কী হতে পারতো বা ভবিষ্যতে কী হতে পারে তা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তা করি। কষ্ট ভোগ করি। কারণ আমরা কষ্ট পেতে ভালোবাসি। যাকে বলে কষ্ট বিলাসীতা।

যাই হোক হতাশা, দুশ্চিন্তা মুক্ত হতে হলে শোকারগোজার হতে হবে। যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে এবং পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্যে নিরলস প্রয়াস চালাতে হবে। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ও আত্মিক বিশুদ্ধতাকে নিশ্চিত করতে হবে। শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা যাবেনা। অন্যের ভালো-মন্দ, সুবিধা-অসুবিধা নিয়েও চিন্তা করতে হবে।  আত্মকেন্দ্রীকতা থেকে বেরিয়ে সার্বজনীন মঙ্গল চিন্তা করতে হবে। সচেতনভাবে নেতিচিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। নেতিবাচক মানুষদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। স্রষ্টার উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে। জীবনের লক্ষ ও পরিণতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। সৃষ্টির সেবায় আত্ম নিয়োগ করতে হবে। হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হতে হবে। সবসময় নিজেকে স্রষ্টার অনুগ্রহভাজন একজন হিসেবে ভাবতে হবে। সব কিছুই আমার অনুকূলে থাকবে, আমার জীবনে যা ঘটবে তা সবকিছুই আমার ভালোর জন্যেই ঘটবে এভাবে ভাবতে হবে। স্রষ্টা চাইলে ভালো সবকিছুই আমার পক্ষ্যে করা সম্বভন এ বিশ্বাসী বলীয়ান হতে হবে। বিপদ-আপদে হতাশ না হয়ে, দুশ্চিন্তা না করে র্ধৈয্য ধারণ করতে হবে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করতে হবে। রাসূল (সঃ) বলেন, ‘যে তার দৃষ্টিভঙি পরিবর্তন করবে, আল্লাহ তার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বদলে দেবেন।’

One thought on “হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় কী?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *