ভয় আসলে একটি মরিচিকা। ভয় এর কোন বাস্তবভিত্তি নেই। ভূতের পা যেমন পেছনের দিকে থাকে, ভয়ের পা’ও তেমনি পেছনের দিকে থাকে। অর্থাৎ, ভয় অপনার সকল যোগ্যতা, সকল সম্ভাবনাকে, সৃজনশীলতা ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। শরীর ও মনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ভয়।
মন থেকে ভয় দূর করে সাহসী হয়ে উঠার উপায় সমূহঃ
(ক) আপনি সাহসী হওয়ার অভিনয় করুন। আপনার মন বাস্তবতা ও অভিনয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। তাই সাহসের অভিনয় করতে করতে একদিন আপনি সত্যি সত্যিই সাহসী উঠবেন।
(খ) সময় বের করে প্রতিদিন ভয় মুক্তির মেডিটেশন করুন। এই মেডিটেশননের মধ্যে আপনি নিচের কাজগুলো করুন –
(গ) আপনি যা কিছুকে ভয় পান তার একটি তালিকা করুন। যেমন – আমি তেলাপকো ভয় পাই, আমি টিকটিকির লেজ ভয় পাই, আপি ভুতের ভয় পাই, আমি প্লেনে চড়তে ভয় পাই, আমি যদি পরীক্ষায় ফেল করি এই ভয়, যদি চাকরী চলে যায়, যদি অসুস্থ হয়ে যাই এমনকি যদি মারা যাই ——— এভাবে একটি পূর্নাঙ্গ তালিকা তৈরী করুন। তালিকা তৈরী হয়ে গেলে সেগুলো ২য়বার আর পড়বেন না। তারপর সেই তালিকাটি আগুনে পুড়ে ফেলুন, বা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে পানিতে ভাসিয়ে দিন। তারপর নিজেকে বলুন এখন থেকে আমার সব ভয় নির্বাসিত, এখন আমি ভয় মুক্ত।
(ঘ) সারাদিন যখনই সময় পান মনে মনে বলুন – আমি বিশ্বাসী, আমি সাহসী। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই আপনি দুর্দান্ত সাহসী হয়ে উঠেছেন।
(চ) ভয়ের সময় নাক দিয়ে ফুসফুস ভরে দম নিয়ে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে দম ছাড়ার চর্চা ১৫ থেবে ২০ করলে নার্ভাস সিষ্টেম ও শরীরের পেশী অনেকটা শিথীল হয় ও ভয় ধীরে ধীরে কেটে যায়।
(ছ) যে বিষয়ে ভয় পাচ্ছেন, তার সর্বোচ্চ ক্ষতি কী হতে পারে সে পযর্ন্ত ভেবে না কাগজে লিখে কগজটি ছিড়ে টুকরো টুকরো করে পানিতে ভিজিয়ে পেলতে পারেন বা আগুনে পুড়ে ফেলতে পারেন। দেখবেন যে আপনার ভয়ের কারণ আপনার কাছে চলে গিয়েছে।
(জ) স্রষ্টা আপনাকে যা কিছু দিয়েছেন সেগুলো একটি একটি করে স্মরণ করুণ, তালিকা করুণ। দেখবেন যে স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতায়-শোকরিয়ার আপনার মন ভরে উঠেছে আর আপনার অজান্তেই ভয় আপনার কাছ থেকে পালিয়ে গেছে।
(ঝ) ধর্ম-কর্মে মনোযোগ দিন, সৃষ্টির সেবায় আত্মনিয়োগ করুন, প্রতিদিন নিয়ম করে শারীরিক ব্যয়াম করুণ। ভয় ধীরে ধীরে প্রশমিত হয়ে আপনি স্থির ও সৃজনশীল মনের অধিকারী হয়ে উঠবেন।
(ঞ) স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন, পযার্প্ত পরিমাণ পানি পান করুণ, দুধ চা, কফি, চিনি ও চিনি দিয়ে তৈরী খাবার পরিহার করুন, রিচ ফুড ও ফাস্ট ফুড যথা সম্ভব বর্জন করুন।
(ট) সকালে ও রাতে সূরা রাদ এর ১১ নম্বর আয়াতটি পড়ুন – ‘মানুষের সামনে ও পেছনে রয়েছে একাধিক অদৃশ্য প্রহরী। আল্লাহর আদেশ অনুসারে তারা তার হেফাজত করে। নিজের ভেতর থেকে না বদলালে (অর্থাৎ দৃষ্টিভঙ্গি না বদলালে) আল্লাহ কোনো জাতির (বা মানুষের) অবস্থা বদলান না। যখন আল্লাহ কোনো জনগোষ্ঠীকে (তাদের সামগ্রিক পাপাচার ও অন্যায়ের জন্যে) শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তা রদ করার ক্ষমতা কারো নেই। কারণ আল্লাহ ছাড়া কেউই ওদের রক্ষা করতে পারবে না।’ এক সময় আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন যে, মহান স্রষ্টা তাঁর অদৃশ্য প্রহরী দিয়ে আপনাকে পাহারা দিচ্ছেন, হেফাজন করছেন। উপলব্ধি করতে পারবেন যে ভয়ের ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর নিজেক ভীতু মনে করছেন না। বরং দুর্দান্ত সাহসিকতার সাথে আপনার করণীয় কাজগুলো করতে পারছেন। দেখবেন যে আপনি ভয় মুক্ত হয়ে উঠছেন। মনে রাখতে হবে যে, ভয়কে আপনি জয় করতে না পারলে, ভয়ই আপনাকে জয় করবে, আপনার উপর সে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে। আর তখনই একজন মানুষ আসলে ভীতু কাপুরুষ হিসেবে পরিচিতি পায়। অথচ সাহসীরা একবারই মরে, আর ভীতু কাপুরুষরা মরে হাজারবার। তাই নিজের প্রতি আস্থা রাখতে হবে, নিজের যোগ্যতা-দক্ষতার উপর আস্থা রাখতে হবে, সর্বোপরি স্রষ্টার উপর আস্থা রাখতে হবে। সবসময় মনে করতে হবে যে আমার জনে যা কল্যাণকর তাই আমার জীবনে ঘটবে। স্রষ্টা চাইলে সবই সম্ভব।