ভাবনা কীভাবে সুখ ও সাফল্য সৃষ্টি করে?

ভাবনা কীভাবে সুখ ও সাফল্য সৃষ্টি করে?

ভাবনা হচ্ছে সাফল্য ও ব্যর্থতার মা। ইতিবাচক ভাবনা সাফল্য সৃষ্টি করে আর নেতিবাচক ভাবনা থেকে আসে ব্যর্থতা। মানুষ মাত্রই সুখ ও সাফল্য প্রত্যাশী। কিন্তু সবাই কী জীবনে সুখ ও সাফল্য অর্জন করতে পারে? নিশ্বয়ই না। কেন? কারণ একেক জনের কাছে সুখ ও সাফল্যের সংজ্ঞা একেক রকম। ব্যাক্তি বিশেষের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি ও চিন্তার প্রক্রিয়ার উপরই নির্ভর করে তার সুখ ও সাফল্য।

মানুষ কয়রকম? এ প্রশ্নের উত্তরে মনে পড়ে যায় সেই বারো রকমের মানুষ নাটকটির কথা। বিটিভিতে একটা সময় এ নামে ধারাবাহিক একটি নাটক প্রচারিত হতো। তাহলে ভাবনা কতরকম হতে পারে? আমরা বলব যে, প্রতিটি মানুষই যেহেতু আলাদা, তাই বারো রকমের মানুষের বারো রকম ভাবনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। ঠিকই আছে। একজন ব্যস্ত ব্যবসায়ীর ভাবনা তার ব্যবসার মুনাফা-ক্ষতি নিয়ে, একজন গৃহিণীর ভানা তার ঘর-সংসার-পরিজন নিয়ে, একজন অফিস কর্মকর্তার ভাবনা তার অফিস ডিলিংস নিয়ে, একজন শিক্ষার্থীর ভাবনা তার পড়াশোনাসহ নিজেকে তৈরি করার আরো খুঁটিনাটি নিয়ে, এমনকি একটি শিশুরও ভাবনা আছে। তার ভাবনার বেশিরভাগ জুড়েই থাকে তার খেলনা। যে কারণে আরেকটি শিশু তার সাথে খেলতে এলেও সে খেয়াল রাখে নিজের খেলনা যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায়। সেইসাথে যদি আরো কিছু খেলনা উপহার হিসেবে পাওয়া যায় কারো কাছ থেকে-এই আশাবাদী ভাবনাও তার থাকে।

তার মানে আমরা কেউই ভাবনার বাইরে নই। মানে চিন্তামুক্ত নই। কারো ভাবনা আশাবাদী, কারো ভাবনা নৈরাশ্যের। কারো ভাবনা ইতিবাচক, কারো ভাবনা নেতিবাচক। কারো ভাবনা গঠনমূলক, সৃজনশীল আর কারো চিন্তা ধ্বংসাত্মক। এই যে ভাবনার ঢেউ, কখনো ঊর্ধ্বমুখী, আবার কখনো নিম্নগামী, এটাই সহজভাবে মেনে নিয়ে আমরা আমাদের জীবনকে সাজাতে চাই। যা যা যুক্তিসঙ্গত চাওয়া, তা পেতে চাই। সুখ চাই, শান্তি চাই, প্রাচুর্য চাই, সাফল্য চাই, নিরাময় চাই, ভালো রেজাল্ট চাই, ঘরে সুখ চাই, আনন্দময় কাজ দিয়ে পেশাজীবন সাজাতে চাই, আত্মিক শান্তি চাই, পরম করুণাময়ের নৈকট্য চাই, প্রাণভরে সেজদা দিতে চাই বা প্রণতি জানাতে চাই। তবে সবচেয়ে বড় চাওয়া হলো, এই চাওয়াগুলো পাওয়ার জন্যে ইতিবাচক হতে চাই। কীভাবে? একটু পরে আমরা দেখব। তার আগে দুজনের ঘটনা বলি। 

একজন আশাবাদী চিন্তার, আরেকজন নিরাশার কথাই ভাবতে পছন্দ করেন তার মনের অজান্তে। শুধু তিনি নন, বেশিরভাগ মানুষই আসলে নেতি-টাই আগে ভাবেন, নেতিচিন্তাটাই তাদের মনে প্রথমে কাজ করে। যেমন ধরুন, রাত ১২টার দিকে ফোন এলো। রিসিভ করার আগেই ফোনসেট ধরতে না ধরতেই আমরা ভাবি, এত রাতে ফোন! কোনো দুঃসংবাদ না তো! দেখা গেল, ফোনের ওপাশ থেকে ওয়াও! ওয়াও! শব্দ আসছে। মানে কি? নতুন একজন মানুষ এই মাত্র পৃথিবীতে এসেছেন। এটা তো সুসংবাদ। তাহলে কেন খামোখা আশঙ্কা করলাম ফোন ধরার শুরুতে? যে দুজনের কথা বলতে চাচ্ছিলাম, তাদের সেই ঘটনাটা বলি। 

একজনের নাম ধরা যাক ক, আরেকজনের নাম খ

ক একটি চাকরির জন্যে আবেদন করেছে, ইন্টারভিউ কলও এসেছে। তারপরও সে মনে করছে যে, সে এই চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না। সে ইন্টারভিউ দিতে যাবে বলে ঠিক করল, এত পয়সা খরচ করে আবেদন যেহেতু করেছে। এর আগেও কয়েকটি ইন্টারভিউ সে দিয়েছে। কিন্তু কোনোটিতেই হয় নি। এই দুঃসহ স্মৃতিও তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে এবং তার মনে আশঙ্কা সৃষ্টি করছে এই বলে যে, এবারেরটাও বোধ হয় হবে না। শুধু তাই নয়, দিন যত ঘনিয়ে আসে, ক-এর মনে এই ধারণা নিশ্চিত হতে থাকে যে, এই চাকরি তার আরো অনেক সহপাঠী যারা এপ্লাই করেছে, তাদের হলেও হতে পারে, কিন্তু তার হবেই না। এবারো সে প্রত্যাখ্যাত হবে। সারা সপ্তাহ ধরে এই ধারণা তার মনে বদ্ধমূল হয়ে গেল। 

যেদিন ইন্টারভিউ, ক-এর ঘুম একটু দেরিতেই ভাঙল। কাপড় পরতে যাবে, দেখে যে আয়রন করা নেই। এদিকে আয়রন করারও সময় নেই। সেই কুচকানো শার্ট পড়ে সে রওনা করল। নাশতা করারও সময় পায় নি। ওখানে পৌঁছে দেখে যে, কল করা শুরু হয়ে গেছে। এই অবস্থায় নাশতা করে আসতেও দেরি হয়ে যাবে। অবশেষে ক্ষুধার্ত ক রাজ্যের দুঃশ্চিন্তা মাথায় বোঝা করে নিয়ে মলিন মুখে যখন ইন্টারভিউ দিয়ে বেরিয়ে এলো, অন্যদের বুঝতে আর বাকি রইল না যে, এই অফিসে ক-এর আর কোনোদিন আসার সুযোগ হবে না। মানে, চাকরিটি সে পাবে না। আমরা বলব না যে, চাকরিটি তার হয় নি। কারণ, হয় নি বললে পারিপার্শ্বিক আরো নানান প্রতিকূলতার বিষয়টি চলে আসে। কিন্তু আমাদের ঘটনার এই খলনায়ক নিজেই নিজের সম্ভাবনাকে কেটে টুকরো টুকরো করেছে। ওদিকে খ, নিজের সম্ভাবনাকে আরো বড় করেছে। কীভাবে?

একই ইন্টারভিউ খ দিয়েছে। এবং সে চাকরিটি পেয়েছে। কেন জানেন? কারণ, তার শুরু থেকেই তাগিদ ছিল যে, এই চাকরিটি তার দরকার। এবং কীভাবে আমি এই চাকরিটি পেতে পারি, সে চিন্তায় সে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে। সপ্তাহের শুরুতেই কোন ড্রেস পড়বে তা ধুয়ে, ইস্ত্রি করে গুছিয়েছে। জুতো পলিশ করেছে। শেভ করেছে। যেদিন ইন্টারভিউ সেদিন সকালে অন্যদিনের চেয়ে আগেই ঘুম থেকে উঠেছে। গোসল করে নামাজ পড়ে নিয়েছে। নাশতার আগেই দান করে আল্লাহকে বলেছে যে, এ অফিসে যদি আমার মঙ্গল থাকে, তাহলে আমার জন্যে চাকরি পাওয়াটা সহজ করে দাও। কিছুটা সময় ধ্যান করে স্থির হয়ে নিয়েছে। তারপর নাশতা করে রেডি হয়ে সময়ের মধ্যেই সে অফিসে পৌঁছে গেছে। তার প্রস্তুতির যে ছাপ, সেটা তার চেহারাতেই ছিল স্পষ্ট। যে কারণে ইন্টারভিউ বোর্ড তাকে দেখেই বুঝে গেছেন যে, এ আমাদের অফিসের কাজের জন্যেও প্রস্তুত। কয়েকদিন পরেই তার মেইলে চলে এসেছে এপয়েন্টমেন্ট লেটার।   

সত্যি বলতে কি, ক ও খ দুজনেই সহপাঠী। যোগ্যতায় খুব বেশি ফারাক কিন্তু ছিল না দুজনের মধ্যে। তারপরও খ কেন টিকে গেল? এখানে কি কোনো জাদু কাজ করছিল? নাহ। সবটাই আসলে ছিল প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যে। একটা আশাবাদী চিন্তা একজন মানুষের ওপর যখন ভর করে, তখন সে মানুষটির প্রতিটি পদক্ষেপ কত সুন্দরভাবে হয়, একটার পর একটা সঠিক সিদ্ধান্ত ও সময়মতো সঠিক কাজ তাকে লক্ষ্য অর্জনের দিকে কত সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়, ক ও খ এর প্রাপ্তির পার্থক্য থেকেই আমরা এটি বুঝতে চেষ্টা করলাম। আসলে আমরা কোনোকিছু পারি কখন? পারি তখনই যখন ভাবতে পারি, বিশ্বাস করতে পারি, আমি পারব, আমি করব। ইতিহাস সাক্ষী, আজ পর্যন্ত আত্মবিশ্বাসদৃপ্ত হয়ে যারাই বলেছেন, তোমাকে আসতেই হবে হে চাকরি, আজ হোক কাল হোক তোমার না এসে নিষ্কৃতি নেই, তাদের কাজ ছাড়া বেকার হয়ে থাকতে হয় নি।  

একটা গল্প বলি। গল্পটি এক বাবা এবং তার ছেলের। বাবা এবং ছেলে একদিন এক জঙ্গলের পথে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল। পথটা ছিল পাহাড়ি পথ। হঠাৎ করেই ছেলে হাঁটতে হাঁটতে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। ব্যথায় সে চিৎকার করে উঠল- আহহহ …. বলে।

তখন সে খুব বিস্ময়ের সাথে শুনল পাহাড় থেকে তার মতোই একটা শব্দ আসছে। আহহহ….

তখন সে খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল তুমি কে? কিন্তু উত্তরে শুনতে পেল কণ্ঠটি বলছে, তুমি কে?

এই উত্তর শুনে সে বিরক্ত হয়ে বলল, তুমি একটা ভীরু! আর সেই কণ্ঠটিও তখন উত্তর দিল তুমি একটা ভীরু!

কী আশ্চর্যের বিষয় তাই না!

তখন ছেলেটি তার বাবাকে জিজ্ঞেস করল, বাবা এসব কী হচ্ছে?

তখন বাবা ছেলেকে বললেন, তুমি একটু মনোযোগ দাও। তাহলে বুঝতে পারবে যে কী হচ্ছে।

তখন বাবা চিৎকার করে বললেন, তুমি অনেক ভালো। তখন সেই কণ্ঠটিও বলল, তুমি অনেক ভালো।

বাবা আবার বললেন, তুমি খুব সুন্দর। এবং কণ্ঠটিও তখন চিৎকার করে বলল, তুমি খুব সুন্দর। 

ছেলেটি তখনো বিস্মিত। কারণ সে বুঝতে পারছে না যে এসব কী হচ্ছে। কেন তারা যা বলছে কণ্ঠটিও তা-ই বলছে। তখন তার বাবা তাকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বললেন, মানুষ এটাকে বলে প্রতিধ্বনি। কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে আমাদের জীবনটাও এমনই। জীবন তোমাকে সবসময় তা-ই দেবে যা তুমি জীবনকে দেবে। ভাবনা যখন ভালো হবে, ভালো ফল হবে। আর যদি মন্দ ভাবনা থাকে, মন্দ পরিণাম ঘটবে। 

একজন ফার্নিচার ডিজাইনার মহিলার ঘটনা শেয়ার করি। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডা. ম্যাক্সওয়েল মলজ এ ঘটনাটি বলছিলেন। মহিলার অসুবিধা তার বসকে নিয়ে। তার ধারণা, এই বস ইচ্ছে করেই তার সবচেয়ে সুন্দর ডিজাইনগুলোকেও বাতিল করে দেন। শুধু তাই নয়, তার সমালোচনা করেন সবসময়, তার সাথে কঠোর ও অন্যায় আচরণও করেন। ডা. মলজ ধৈর্য ধরে সবটা শুনলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা বলুন তো, আপনি কি আপনার বসের সাথে মনে মনে কথা বলেন। মহিলা বললেন, বলি। কথাগুলোর বেশিরভাগই কি ক্ষোভ ও সমালোচনায় পরিপূর্ণ? মহিলা স্বীকার করলেন। বললেন যে, প্রতিদিন সকালে কাজে যাওয়ার পথে মালিক সম্পর্কে এমন সব কথা ভাবেন, মালিককে এমন সব কথা তিনি শোনান, যা আবার মালিকের সামনে বলার সাহস তার নেই। এই যে মহিলার মনে তর্ক-বিতর্কের শক্তি, এটাই পরে বাস্তবে প্রকাশ পায় মালিকের আচরণে। ধরুন, মালিক যদি অন্য কোনো কারণেও ভ্রূ কুঁচকে ফেলেন, মহিলা মনে করেন যে, তাকে উদ্দেশ্য করেই সেটি করেছেন মালিক। 

ডা. মলজ খুব মমতা নিয়ে মহিলাকে বোঝালেন। বললেন যে, এখন থেকে একটু কষ্ট হলেও মালিক সম্পর্কে ভালো ভালো কথা, চিন্তা যেন তিনি মনে মনে ভাবেন। তিনি যেন ভাবেন যে, মালিক তার ভালো কাজের প্রশংসা করছেন, জবাবে তিনিও ধন্যবাদ দিচ্ছেন, সবটাই হচ্ছে হাসি হাসি মুখে। কয়েকদিনের পরে মহিলা আবার এলেন। এবার তার মন খুব ভালো। তিনি খুব খুশি। কারণ, মালিকের সাথে আর কোনো ভুল বোঝাবুঝি তার হচ্ছে না। 

অর্থাৎ ভালো ভাবনা, ভালো কথা, ভালো আচরণ সবটা মিলেই আমাদের অর্জনের ঝুলি বাড়তে থাকে। যেমন ধরুন, একটি সুস্থ সন্তানের জন্ম হওয়া, এটি যে কত বড় প্রাপ্তি, কত বড় নেয়ামত এটা কারা বোঝেন? যাদের কোনো না কোনো কারণে সুস্থ সন্তান হয় না। বিজ্ঞানীরা, গবেষকরা বছরের পর বছর তাদের অবজারভেশন থেকে দেখেছেন যে, গর্ভাবস্থায় যেসব মা খুব বেশি স্ট্রেস-আক্রান্ত ছিলেন, পরবর্তীতে তারা অস্থিরমতি, অপরিণত ও স্বল্প ওজনধারী সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, অটিজমের আশঙ্কা তো রয়েছেই। কারণ, স্ট্রেস ও নেতিবাচক আবেগ মায়ের শরীরে যে কর্টিসোল হরমোন নিঃসৃত করে, তা গর্ভের সন্তানকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। অন্যদিকে ইতিবাচক ভাবনা, ভালো কথা, অটোসাজেশন, মেডিটেশন এবং গর্ভকালীন পুরোটা সময় একটি সুস্থ, প্রাণবন্ত, ফুটফুটে সন্তানের চিন্তা মায়ের শরীরে আনন্দবর্ধক হরমোন এন্ডোরফিনের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। মায়েরা যত প্রশান্ত থাকেন, সন্তান তত মেধাবী, প্রত্যয়ী ও সাহসী হয়ে ওঠে। এগুলো শুধু দুয়েকটি বাচ্চার ক্ষেত্রে নয়, ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল, এই ২২টি বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ১.৩৮ মিলিয়ন শিশুর ওপর তাদের মায়ের চিন্তা, কথা ও মানসিক অবস্থার প্রভাবকে শনাক্ত করেছেন। যে কারণে দেখুন যে মায়েরা গর্ভকালীন সময়ে মেডিটেশন করেন, ইতিবাচক ভাবনা ভাবেন তাদের প্রেশার নরমাল থাকে, অন্যান্য জটিলতাও কম থাকে, সুস্থ প্রাণবন্ত শিশুর জন্ম তারা দেন। 

ভাবনার প্রভাব নিরাময়ের ক্ষেত্রেও দারুণ কাজ করে। কারণ অবচেতন মন তো ভালো ও মন্দের পার্থক্য করতে পারে না। আবার স্বতঃস্ফূর্তভাবেই অবচেতন মনটা নেতিবাচক চিন্তাটাই আগে করে ফেলে। একটু আগে যেরকম বলছিলাম যে, রাত ১২টার পরে ফোন এলে আগে আঁতকে উঠি। ঘটনা যা-ই ঘটুক, আগে যেন ইতিবাচক ভাবনাটাই মনে আসে সেজন্যে প্রয়োজন ধ্যান, মেডিটেশন। কারণ, মেডিটেশেনের সময়টাতে আমরা মনকে অনেকগুলো ইতিবাচক কথা শোনাই। ইতিবাচক কথা তখন ইতিবাচকভাবনা অভ্যাসকে আয়ত্ত করতে অভ্যস্ত করছে আমাদেরকে। ফলে আমরা প্রতিদিন থেকে প্রতিদিন সবদিক দিয়ে ভালো হওয়ার পথে, লাভবান হওয়ার দিকে এগুতে পারছি এবং একসময় সুখী ও সফল হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করছি।

তবে এখানে শর্ত একটাই-কাজ করতে হবে। ইতিবাচক ভাবনা যত করি না কেন, কথা বলি না কেন, কাজ করতে হবে, কাজে লেগে থাকতে হবে, সাফল্যের জন্যে প্রানান্ত প্রয়াস চালাতে হবে। শ্রদ্ধেয় আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার তার ভাঙো দুর্দশার বৃত্ত বইটিতে লিখেছেন, আসলে স্বপ্ন বলে আলাদা কিছু নেই। স্বপ্নের জন্যে আমরা যতটুকু কাজ করি, তা-ই আমাদের স্বপ্ন।

আমরা নিজেদের স্বপ্নের জন্যে কি ওই কাজগুলো করি? না করলে সাফল্য আসবে কী করে? আপনি যখন দোকানে যান, একটা সাধারণ মানের শাড়ির জন্যে কত টাকা দেন? তিন শ, চার শ, পাঁচ শ, বড়জোর হাজার। কিন্তু দামি কোনো শাড়ির জন্যে? হাজার এমনকি কয়েক লাখও হতে পারে। অর্থাৎ জিনিশ যত বড় চাইবেন, দামও তত বেশি দিতে হবে। দেব তিন শ টাকা, আর চাইব তিন লক্ষ টাকার জিনিশ, তা কি হবে? বসে বসে স্বপ্ন দেখব, কিন্তু তার জন্যে শ্রম, স্বেদ রক্ত কিছুই দেব না-সেই স্বপ্ন কি কোনোদিন বাস্তব হবে? তাই চাই কাজ। কাজ এক আশ্চর্য জিনিশ। কাজ রাস্তার আবর্জনার মতো নেতিবাচকতাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দেয়।  তখন থাকে শুধু কী? ইতিবাচকতা, যা সৃষ্টি করবে সুখ ও সাফল্য। পরম করুণাময় আমাদের জীবনকে সুখ ও সাফল্যে ভরপুর করে দিতে সাহায্য করুন। এই প্রার্থনাই আমরা সবাই সবার জন্যে করি।

One thought on “ভাবনা কীভাবে সুখ ও সাফল্য সৃষ্টি করে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *